October 7, 2024

লকডাউনে প্রত্যহ এইগুলোর অভ্যাস করুন এবং সুস্থ নীরোগ দীর্ঘ জীবন লাভ করুন- বিস্তারিত জানুন

1 min read

স্বাস্থ্যই সম্পদ

লিপিকা দত্ত (বর্মা)
‘স্বাস্থ‍্যই সম্পদ’ – এই প্রবাদ বাক‍্যটি আমরা সবাই শুনেছি। কিন্তু এই সম্পদ রক্ষার্থে আমরা ততটা আগ্রহী নই। প্রাত‍্যহিক যৌগিক ক্রিয়াদির মাধ্যমে আমরা সহজেই এই সম্পদ রক্ষা করতে পারি। সাতটি প্রাণায়াম, সাতটি সুখায়াম এবং সাতটি আসনের মাধ্যমে আমরা সুস্থ নীরোগ দীর্ঘ জীবন লাভ করতে পারি।
Health Tips
প্রতিদিন ভোরে উঠে মুখভর্তি জল নিয়ে চোখে ১৫-২০ বার পরিস্কার ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিতে হবে। তারপর খালিপেটে লবন-লেবু দিয়ে কয়েক গ্লাস হালকা গরম জল খেতে হবে। এরপর প্রাতঃকৃত‍্যাদি শেষ করে কোনূ খোলা জায়গায় চাদর বিছিয়ে নিম্নলিখিত প্রাণায়াম, সুখায়ম এবং আসন একাদিক্রমে সম্পন্ন করতে হবে।
প্রথমে পদ্মাসনে বা যেভাবে পা ভাঁজ করে স্বাভাবিকভাবে বসি (বাবু হয়ে বসা ) সেভাবে বসে হাত দুটো দুই হাঁটুর উপর রেখে (তালুর উল্টো দিকটা হাঁটুতে ঠেকবে) বুড়ো আঙুল দিয়ে তর্জনী ধরে বাকি আঙুলগুলো সোজা রেখে প্রাণায়াম শুরু করতে হবে।
প্রথম- ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম : উপরোক্ত আসনে বসে শিরদাঁড়া সোজা রেখে, চোখ বন্ধ করে, মুখ বন্ধ করে, শুধু নাক দিয়ে ধীরে ধীরে জোরে শ্বাস নিতে হবে আবার নাক দিয়েই ছাড়তে হবে। যতটা সময় ধরে শ্বাস গ্রহণ করা হবে তত সময় ধরেই শ্বাস ছাড়তে হবে। যত দীর্ঘ শ্বাস গ্রহণ করা হবে ততই ভালো হবে। আর খেয়াল রাখতে হবে শ্বাস নেওয়ার সময় যেন ছাতি কিছুটা স্ফীত হয়। এটা ১০মিঃ করতে হবে।
দ্বিতীয়- কপালভাতি প্রাণায়াম : একইভাবে বসে প্রথমে নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে, নাক দিয়ে, নাক দিয়েই অনবরত ফোঁ, ফোঁ করে শ্বাস ছাড়তে হবে। মুখ বন্ধ থাকবে। শ্বাস নিতে হবে না। কেবলমাত্র শ্বাস ছাড়ার দিকেই নজর রাখতে হবে। শ্বাস এমনিই নেওয়া হয়ে যাবে। এটা করতে করতে হবে সেকেন্ডে একবার করে অন্ততঃ ১০মিনিট। হার্টের রুগীরা মিনিটে চল্লিশবার। প্রথম প্রথম একটানা করা যাবে না। অল্প সময় ধরে করতে হবে। আর মাঝে কয়েক সেকেন্ড করে স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস নিতে হবে। তারপর আবার কপালভাতি করে যেতে হবে। এই প্রাণায়াম করার সময় কাঁধ ঝাঁকানো চলবে না, ঘাঢ় সোজা থাকবে। কাঁধে, হাতে কোনো চাপ না পড়ে। স্বাভাবিকভাবে করতে হবে। শারীরিক অসুবিধের সময় এই প্রাণায়াম করা যাবে না।
তৃতীয়- বাহ‍্য-প্রাণায়ম :  উপরোক্ত আসনে বসে নাক দিয়ে পূর্ণ শ্বাস নিয়ে তারপর সম্পূর্ণ শ্বাস দেহের বাইরে ছেড়ে ‘ত্রিবন্ধ’ করতে হবে। অর্থাৎ শ্বাস ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মলদ্বার উপরের দিকে খিঁচতে হবে,  পেট ভিতরে টানতে হবে, থুতনি বুকে ঠেকাতে হবে। এই তিনটি কাজ একসঙ্গে করে দমবন্ধ অবস্থায় যতক্ষণ সম্ভব থাকতে হবে। শ্বাস নিতে নিতে আগের অবস্থায় আসতে হবে। এটা অন্ততঃ পাঁচবার করতে হবে।
এই প্রাণায়াম চৌদ্দ বছরের কম বয়সীরা করবে না। আর শরীর অসুস্থ থাকলেও করা যাবে না।

চতুর্থ – অনুলোম বিলোম :  আগের মতো আসনে বসে বাঁ হাতে হাঁটুর উপর রেখে ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ডান নাক চেপে বাঁ নাক দিয়ে শ্বাস নিতে হবে। তারপর ডান হাতের মধ্যমা- অনামিকা দিয়ে বাঁ নাক চেপে ডান নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়তে হবে। শ্বাস নেওয়া হলে ডান নাক চেপে বাঁ নাক দিয়ে ছাড়তে হবে। সঙ্গে সঙ্গে বাঁ নাক দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করতে হবে। ডান হাতের কনুই কাঁধ বরাবর থাকবে। নাকের কাছে হাতের তালু যেন আড়াল না করে। এভাবে শ্বাস নেওয়া- ছাড়া দীর্ঘায়িত করে একটানা ১০ মিনিট করতে হবে। শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার সময় কোনো শক্তি প্রয়োগ চলবে না। স্বাভাবিকভাবে করতে হবে।

পঞ্চম- ভ্রামরি প্রাণায়াম : পূর্বের মতো আসনে বসে, চোখ বন্ধ করে, শিরদাঁড়া সোজা রেখে দুই হাতের বুড়ো আঙুল দুই কানের ভিতর চেপে রাখতে হবে। দুই হাতের তর্জনী কপাল স্পর্শ করবে আর বাকি তিনটে আঙ্গুল চোখের উপর আলতো করে স্পর্শ করে থাকবে। এই অবস্থায় মুখ বন্ধ করে নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে মুখ বন্ধ রেখেই ‘ওঁ’ উচ্চারণ করতে হবে। যতটা সম্ভব দীর্ঘায়িত শ্বাস নিতে হবে। দাঁতের পাটি পরস্পর চেপে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অন্ততঃ পাঁচবার এই প্রক্রিয়া করতে হবে।

ষষ্ঠ- উদগীথ প্রাণায়াম : একইভাবে সোজা হয়ে বসে হাঁটুর উপর দুই হাত রেখে চোখ ও মুখ বন্ধ করে নাক দিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ‘ওঁম’ উচ্চারণ করতে করতে শ্বাস ছাড়তে হবে। ধীরগতিতে শ্বাস গ্রহণ ও শ্বাস ত্যাগ করতে হবে। কমপক্ষে পাঁচবার করতে হবে।

সপ্তম – উজ্জয়ী : একই আসনে বসে , মুখ বন্ধ রেখে, গলাটা ভেতরে চেপে ( অর্থাৎ শ্বাসটা গলার মধ‍্য দিয়ে যাবে না) শুধু নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে ভেতরে খানিকক্ষণ রেখে ডান নাক চেপে বাঁ নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়তে হবে ধীরে ধীরে। কমপক্ষে পাঁচবার করতে হবে।
এই প্রাণায়াম না করতে পারলে ‘ সিংহাসন ‘ করা যাবে, যার উপকারিতা একই।

সিংহাসন : বজ্রাসনে বসে হাঁটু দুটো এক ফুট – এর মতো ফাঁকা করতে হবে। পিছনে পা দুটো এমনভাবে রাখতে হবে যাতে গোড়ালীতে চাপ না পড়ে আর পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দুটো পরস্পর স্পর্শ করে থাকে। এরপর দুটো হাত হাঁটু দুটোর ফাঁকে একটু ভেতরে দিকে মাটিতে রাখতে হবে। তালু মাটিতে থাকবে, আঙুলগুলো ভিতরের দিকে থাকবে। এই অবস্থায় নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে ঘাঢ় পিছনে দিকে হেলিয়ে মুখ হাঁ করে, জিভ বের করে ‘অ‍্যা’ ‘অ‍্যা’ করে শ্বাস ছাড়তে হবে। পাঁচ-সাত বার করতে হবে।
Handstand
এই সাতটি প্রাণায়াম করার পর সাতটি সুখায়াম করতে হবে।
১ম সুখায়াম : সোজা হয়ে বসে পা দুটো সামনে সোজা করে ছড়িয়ে পায়ের আঙুলগুলো নাড়াতে হবে কিছুক্ষণ। হাতদুটো শরীরের দুইপাশ দিয়ে মাটিতে লাগানো থাকবে।
২য় সুখায়াম : উপরোক্তভাবে বসে পায়ের পাতা ঘোরানো। ডানদিক থেকে বাঁ দিক, বাঁ দিক থেকে ডান দিকে। অন্ততঃ পাঁচবার।
৩য় সুখায়াম : একইভাবে বসে দুই পা এমনভাবে ভাঁজ করতে হবে যাতে দুই পায়ের পাতা পরস্পর স্পর্শ করে। দুই হাত দিয়ে পায়ের পাতাজোড়া ধরে রাখতে হবে। এবার হাঁটু জোড়া প্রথমে ধীরে ধীরে তারপর দ্রুত আবার ধীরে ধীরে নাচতে হবে।
৪র্থ সুখায়াম : সোজা হয়ে বসে কাঁধ বরাবর সামনের দিকে হাত দুটো সোজা করে রাখতে হবে। তারপর হাতের তালু নিচের দিকে করে হাত মুঠো করা এবং খোলা। আঙুলগুলোতে একটু জোর প্রয়োগ করতে হবে।
৫ম সুখায়াম : বাবু হয়ে বসে হাত দুটো ভাঁজ করে দুই কাঁধের উপর দুই হাতের আঙুল স্পর্শ করতে হবে। এবার কনুই দুটো বুকের সামনে পরস্পর জোড়া লাগাতে হবে। এবার কনুই দুটো ঘোরাতে হবে ডান দিক থেকে বাঁ দিকে, বাঁ দিক থেকে ডান দিকে।
৬ষ্ঠ সুখায়াম : একইভাবে বসে হাত দুটো হাঁটুতে রেখে ঘাড় ঘোরাতে হবে। একবার ডান দিক থেকে বাঁ দিকে আবার বাঁ দিক থেকে ডান দিকে।
৭ম সুখায়াম : সোজা হয়ে বসে হাত দুটো মাথার উপর তুলতে হবে। তারপর হাত দুটো ভাঁজ করে মাথার পিছনে একে অন্যের কব্জি ধরবে। তারপর ধীরে ধীরে ডান হাত বাঁ হাতে আর বাঁ হাত ডান হাতে চাপ দেবে ধীরে ধীরে। শরীরের দুই পাশে টান লাগবে।
এছাড়াও অনেক আছে। তার মধ্যে চোখের জন্য একটা দিচ্ছি।
৮ম সুখায়াম : সোজা হয়ে বসে চোখের তারা একবার ডান দিক থেকে বাঁ দিকে ঘোরাতে হবে। তারপর গোল করে ঘোরাতে হবে। আর একবার উপর – নীচ তাকাতে হবে। সবগুলোই অনেকবার করতে হবে।
Handstand
এই সুখায়ামগুলোর পর সাতটা আসন করতে হবে। তবেই আমরা আকাঙিক্ষত ফল পাবো।
(১) শলভাসন, (২) ভূজঙ্গাসন, (৩)উত্থান পদাসন, (৪) সর্বঙ্গাসন, (৫) পবন মুক্তাসন, (৬) ত্রিকোণাসন এবং  (৭) উষ্ট্রাসন।
এছাড়াও করা যায় – হলাসন, গোমুখাসন, কুর্মাসন, অর্ধমৎসেন্দ্রাসন, মৎস‍্যাসন, সুপ্তবজ্রাসন, চক্রাসন, যোগমুদ্রা।
আসনগুলো এমনভাবে করতে হবে যেন প্রথমে দাঁড়িয়ে, তারপর বসে, শেষে শুয়ে করা যায়। প্রতিটি আসান অন্ততঃ তিনবার করতে হবে। সুখায়ামগুলো ৫-৭ বার।
শারীরিক অসুবিধের সময় সবই বন্ধ রাখতে হবে।
বিঃদ্রঃ – এইসব প্রাণায়াম, আসন খালিপেটে করতে হবে। সন্ধ‍্যেবেলা করলে তার ৪-৫ ঘন্টা আগে খাওয়া শেষ করতে হবে।
– সম্পূর্ণ তথ্য নবীনমানুয়া ঈশ্বরচন্দ্র হাই স্কুলের ২০০৬ সালে প্রকাশিত দীপশিখা থেকে নাওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.